স্বাধীন ভারতে দাস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের নেতা স্বামী অগ্নিবেশ প্রয়াত

রূপম চট্টোপাধ্যায়
চলে গেলেন স্বাধীন ভারতে সামাজিক আন্দোলনের এক উজ্জ্বল পুরুষ স্বামী অগ্নিবেশ (Swami Agnivesh)। শুক্রবার সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ দিল্লির লিভার অ্যান্ড বিলিয়ার সায়েন্স ইনস্টিটিউটে (Institute of Liver and Biliary Sciences) তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দিনকয়েক আগে যকৃতের জটিল অসুখ নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদিন বিকেলে তাঁর হৃদযন্ত্রে জটিলতা তৈরি হয়। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন স্বামী অগ্নিবেশ।
১৯৭০ সালে তিনি ‘আর্য সমাজে’র ধাঁচে কিছুটা আধুনিক চিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে গড়ে তোলেন ‘আর্য সভা’। হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দাস শ্রমিকদের উদ্ধার করে তিনি ভারতীয় রাজনীতির কারবারিদের চমকে দেন। মহিলাদের সামাজিক অধিকার-সহ কন্যা ভ্রূণ হত্যা, কৃষিতে পেট ভাতা দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানোর বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই উল্লেখ্য। এ রাজ্যে বাম আমলে জঙ্গলমহলে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি সরব হয়েছিলেন। সোচ্চার ছিলেন সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম পর্বেও।
একসময় হরিয়ানায় ভোটে জিতে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাক্ স্বাধীনতার জন্য তিনি সর্বদাই সজাগ ছিলেন। ধর্ম নিয়ে তিনি ছিলেন উদার আলোচনার পক্ষে। গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের জন্য তিনি যে কোনও শাসকদলেরই চক্ষুশূল ছিলেন।
ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে থাকার জন্যই কিছুদিন আগে ঝাড়খণ্ডে তিনি আরএসএস-বিজেপি গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হন। সেদিন হোটেল থেকে বের করে এনে রাস্তায় ফেলে মারা হয় এই বর্ষীয়ান সমাজকর্মীকে। কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন ও দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে তিনি বিজেপি সরকারের কঠোর সামালোচনা করেছেন। একসময় ‘জন লোকপাল বিল’ কার্যকর করার দাবিতে স্বামী অগ্নিবেশ দিল্লিতে আন্না হাজারের মঞ্চেও সামিল হয়েছিলেন। এক কথায় স্বামী অগ্নিবেশের মৃত্যুতে দেশ এক গেরুয়াধারী উদার সমাজকর্মীকে হারাল।
Comments are closed.