উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন শৌচালয়! সরকারি উদাসীনতা সালানপুরে

তৃণাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
করোনাকালে একদিকে যখন চিকিৎসার জন্য বেড পেতে দিশেহারা মানুষজন, তখন বাংলারই এক জেলায় কিছু উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে শৌচাগার হিসেবে। পশ্চিম বর্ধমানের বারাবানি বিধানসভার সালানপুর ব্লকে এক সময় কিছু উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ওই এলাকার মাধাইচকে রয়েছে তেমনই কয়েকটি নির্মীয়মাণ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আশেপাশের গ্রামবাসীদের কথায়, কাজ একটা শুরু হয়েছিল বটে, শেষ হয়নি।
নির্মীয়মাণ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি আজ ভগ্নপ্রায়। দেওয়ালে দেওয়ালে খসে পড়েছে চুন-সুরকির গাঁথনি। প্রশাসনের চরম অবহেলা ও উদাসীনতায় এক এক করে খোয়া গিয়েছে জানলা-দরজা। দাঁত-নখ বের করা কঙ্কালসার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এখন মানুষের আনাগোনা হয় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ বাম সরকারের শেষ জমানায় তৈরির কাজ আরম্ভ হয়েছিল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির। পরিবর্তনের সরকার আসার পরেও কাজ শুরু হতে দেখেছিলেন অনেকেই। তবে ওটুকুই। কোনও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হয়নি উদ্বোধন। কোথাও আসতে দেখা যায়নি চিকিৎসক অথবা নার্সদের।
পশ্চিম বর্ধমানেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিত্যনতুন রেকর্ড ভাঙছে গড়ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অঙ্গনওয়াড়ি– কোভিড টেস্ট, কোয়ারেন্টিনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সরকারি ভবনগুলিকে। সেখানে কেন অন্ধকারে পড়ে সালানপুরের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি?
পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা মহম্মদ আরমান দায় চাপালেন বাম সরকারের দিকে। বললেন, ‘করোনা টেস্টে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গ। তবে এখানে কিছু জায়গায় বাম আমলে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। পরিকাঠামোর অভাবে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’
অপরদিকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে স্থানীয় বিজেপি নেতা অরিজিৎ রায়ের অভিযোগ, ‘এই সরকারের আমলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার গোটাটাই ভেঙে পড়েছে। সরকারি টাকা তছরুপ করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। সরকারের ব্যর্থতায় উদ্বোধন করা যায়নি। করোনার এই দুঃসময়ে অনেক কাজে লাগানো যেত সেগুলিকে।’
রাজনৈতিক চাপানউতোর যতই থাকুক না কেন বঞ্চিত রয়েই গেছে সালানপুর, মাধাইচকের মানুষজন! সরকারি হাসপাতালে যেখানে করোনা রোগীর বেড নিয়ে টানাটানি চলছে, সেখানে কেন এই বেহাল দশা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির। উত্তর অজানা!
Comments are closed.