ময়লা ফেলাই ‘নিয়ম’, ১২ ফুট গভীর খাল আজ দু’ফুট

শুভাশিস মণ্ডল
সচেতনতা এবং দায়িত্বজ্ঞানের অভাবে প্রবাহিত খাল কীভাবে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে তার বড় নজির হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে। হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ৪৬নং ওয়ার্ডের হালদারপাড়া, গোয়ালবাটি পাটোয়ারিপাড়ায় গেলেই বোঝা যাবে সে চিত্র। যে খালের মাধ্যমে এলাকার নিকাশী প্রবাহিত হয়, তাকেই কিনা ‘সচেতন’ ভাবে শেষ করছে এলাকারই কিছু মানুষজন। কেবল অর্থ উপার্জনের ঘোরে বর্জ্যপদার্থ ফেলে ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে খালকে। কী নেই এই খালে! রয়েছে বিয়েবাড়ির উচ্ছিষ্ট থেকে প্লাস্টিক, কাপড়ের টুকরো থেকে ঘরবাড়ির নোংরা ময়লাও। খাল আজ পরিণত হয়েছে কেবল ডাস্টবিনে!
ধ্বংসের মুখে পড়া এই ছোট খাল হাওড়া পুরনিগমের ৪৬নং ওয়ার্ডের হালদারপাড়া, উনসানি গোয়ালবাটি, পাটোয়ারিপাড়া এবং ২নং সুলতানপুর-সহ এলাকার অন্যান্য জায়গার জলনিকাশী ব্যবস্থার একমাত্র পথ। এই খাল দিয়েই নিকাশী জল প্রবাহিত হয়ে স্থানীয় বড় খাল ‘মৌখাল’-এ গিয়ে পড়েছে এটি। আর মৌখাল মিলিত হয়েছে গঙ্গায়। কিছুদিন আগেই পুরনিগমের কর্মীরা সাফাই অভিযান করে গেছেন। পরিষ্কার করার পর আবারও সেই একই অবস্থা। ময়লা ফেলার একমাত্র জায়গা হয়ে উঠেছে এই খালটি!
হালদারপাড়া মোড় এলাকায় রয়েছে বেশকিছু দোকান। বেশ জমজমাট থাকে এলাকাটি। খাওয়ার দোকান থেকে মুদিখানা দোকানের সমস্তরকম প্লাস্টিক প্যাকেট, এমনকী গাড়ি সারাইয়ের গ্যারাজের তেলজল সবই পড়ে এই খালে। তবে সবচেয়ে দূষিত করছে এলাকার একটি অনুষ্ঠানবাড়ি। ‘মালং বাবা সাবরি ম্যারেজ হল’ নামে নতুন ওই অনুষ্ঠানবাড়ির সমস্ত রকম বর্জ্যই ফেলা হচ্ছে এই খালে বলেই অভিযোগ। শোলার থালা থেকে প্লাস্টিক গ্লাস, এমনকী উচ্ছিষ্ট খাবারও। সেই খাবার পচে গিয়ে বাড়ছে দুর্গন্ধও। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসীদের। মালং বাবা সাবরি ম্যারেজ হল-এর মালিক মাসুম আলি সাবরিকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ‘অসাবধানতায় কাজের লোকজন ময়লা ফেলে দিয়েছে খালে। এটা করা উচিত হয়নি। খুবই দুঃখিত আমি। আগামী দিনে কোনওরকম ময়লা ফেলা হবে না খালে।’
হাওড়া পুরনিগমের ৪৬নং ওয়ার্ডের হালদারপাড়া, গোয়ালবাটি পাটোয়ারিপাড়ার খালের বেহাল অবস্থা। 'সচেতন' ভাবে ধংসের মুখে। #MamataOfficial #suvenduadhikari #howrahmunicipalcorporation#districtmagistratehowrah pic.twitter.com/jBtJLPWH8g
— Bengal Fast (@bengal_fast) August 18, 2020
করোনা এবং ডেঙ্গু আবহে রাজ্য সরকার যখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দিচ্ছে তখন এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষজন ডেকে আনছে সমূহ বিপদ। খালের জল আটকে গিয়ে ইতিমধ্যেই মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয়েছে। যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয় এলাকাবাসীদের মধ্যে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকারই এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি জানালেন, ‘সচেতনতার বড় অভাব। আমরা বুঝতে পারছি না এলাকার এই খালটিই আমাদের জলনিকাশীর একমাত্র পথ। আর সেটাকেই আমরা ধ্বংস করছি! এলাকাবাসী হিসাবে আমিও লজ্জিত।’
স্থানীয় সমাজসেবী জাকির আলি খান জানালেন, ‘এই খাল সংস্কারের ব্যাপারে আমি বহু চিঠি করি দফতরে দফতরে। তারপর হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করি। মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট প্রশাসনকে আদেশ দিয়েছিল ২০১৯-এর জুলাইয়ে খাল সংস্কার করার জন্য। তারপর কিছুটা পরিষ্কার হলেও খাল কাটা নিয়ে প্রশাসনের টালবাহনায় পিছতে থাকে সংস্কারের কাজ। গভীরতায় ১২ ফুটের খাল আজ দেড় থেকে দুই ফুটে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা হলেই এলাকার পচা জল বেশকিছু বাড়িতে জমে যায়। এলাকার নতুন একটি বিয়েবাড়ির যাবতীয় নোংরাও এই খালে ফেলা হয়। হাইকোর্টের আদেশকে অমান্য করা হচ্ছে। খালে ময়লা ফেললেই ফাইন নেওয়া হলে ভাল হয়।’
অপর এক বাসিন্দা শেখ শরাফতের কথায়, ‘এলাকার লোকজনকে অনেক করে বলা হচ্ছে খালে ময়লা না ফেলতে। তবুও ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এমনকী কর্পোরেশনেও বারবার জানানো হয়েছে খাল সংস্কারের জন্য। কোনওরকমে জঞ্জাল সাফাই ছাড়া আর কিছুই হয় না।’
এলাকার একটি প্রবাহমান খাল শুধুমাত্র আজ জনসচেতনতার অভাবে ধ্বংসের মুখে। প্রশাসন হয়তো বড় ভূমিকা নেবে একথা ঠিক, তবুও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক হিসাবে ৪৬নং ওয়ার্ডের হালদারপাড়া, উনসানি গোয়ালবাটি, পাটোয়ারিপাড়া এবং ২নং সুলতানপুরের মানুষজনদের অবশ্যই এগিয়ে আসতেই হবে। আর একাজে তরুণ সমাজ বা স্থানীয় ক্লাবের বড় ভূমিকা থেকেই যায়।
Comments are closed.