Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

মেলার মাঠে পাঁচিল তৈরি নিয়ে রণক্ষেত্র বিশ্বভারতী, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব সংবাদদাতা : পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র বিশ্বভারতী। জেসিবি মেশিন দিয়ে পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হল বিশ্বভারতীর। ভেঙে দেওয়া হয় বিশ্বভারতীর একটি গেটও। পাশাপাশি ব্যাপক গণ্ডগোল, ভাঙচুর চলল গোটা এলাকায়। উত্তেজনা পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্বভারতী বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রককেও।

শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লি লাগোয়া পৌষ মেলার মাঠ শনিবার সকালে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু করে বিশ্বভারতী। মেলার মাঠ ঘেরার প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। ‘মেলার মাঠ বাঁচাও, শান্তিনিকেতন বাঁচাও’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ তৈরি হয়। পাঁচিল তোলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজির হন ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য থেকে এলাকার প্রায় হাজারখানেক মানুষ। উত্তেজনা চরমে পৌঁছলে যে ঠিকাদার পাঁচিল দেওয়ার কাজের বরাত পেয়েছে, তাঁকে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। ঘটনার জেরে ব্যবসায়ীদের নামে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগও দায়ের করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় অধ্যাপক এবং কর্মীদের রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে আসার নির্দেশ দিয়ে মেসেজ পাঠান রেজিস্ট্রার। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্ব বিশাল মিছিল করে সকাল ৯টা নাগাদ প্রায় ৩০০ জন অধ্যাপক-কর্মী শান্তিনিকেতন থানা সংলগ্ন মেলার মাঠে উপস্থিত হয়। বিশ্বভারতীর বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা চারদিক ঘিরে ফেলে। শান্তিনিকেতন থানার সামনের রাস্তায় যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরে মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়ার জন্য জেসিবি দিয়ে গর্ত করার কাজ শুরু হয়।

- Sponsored -

মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়ার খবর খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়লে জমায়েত বাড়ে ঘটনাস্থলে। ব্যবসায়ী সমিতি ছাড়াও প্রায় হাজার খানেক মানুষ হাজির হয় পাঁচিল তোলার প্রতিবাদ জানাতে। তীব্র প্রতিবাদ জানান আশ্রমিক থেকে নাগরিক সমাজ। সে সময় ব্যাপক নিরাপত্তার ঘোরটোপে ছিলেন উপাচার্য। কথা কাটাকাটি থেকে হঠাৎই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্থানীয় জনতা। যদিও মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সিদ্ধান্ত। মেলার মাঠ ঘেরা হলেও শান্তিনিকেতন ও বোলপুরের বাসিন্দাদের খেলাধূলা বা প্রাতর্ভ্রমণে অসুবিধা হবে না।’ তবু অশান্ত হয়ে ওঠে এলাকা। বিক্ষুদ্ধ জনতা বন্ধ করে দেয় নির্মাণ কাজ। সে সময় নাকি উপস্থিতও ছিলেন দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশ বাউরিও। উত্তেজিত জনতার একটি বড় অংশ নির্মাণ সামগ্রী লণ্ডভণ্ড করে দেন। এলোপাথাড়ি ভাঙচুর চালানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পেও। নির্মাণের জন্য আনা জেসিবি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গেটের স্তম্ভ ভেঙে দেয় জনতা। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি গেটের তালা ভেঙেও ভিতরে ঢুকে পড়ে বিক্ষুব্ধ জনতা। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি-র পক্ষ থেকে বোলপুর থানায় এফআইআরও দায়ের করা হয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নামে। কমিটির অভিযোগ, অতিমারী পরিস্থিতিতে যেখানে ৫০ জনের বেশি জমায়েতে প্রশাসনের নিষেধ রয়েছে, সেখানে বিশ্বভারতীর উপাচার্য কী করে প্রায় ৩০০ লোকের জমায়েত করে পাঁচিল তৈরির কাজ শুরু করেন।

ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। ট্যুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাজ্যপাল ট্যুইটে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন।’ তবে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়েও মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘আমি চাইনা ওখানে কোনও নির্মাণ হোক। অনুরোধ, এমন কিছু যাতে না হয়, যাতে বাংলার ঐতিহ্যে আঘাত লাগে। কোন গৌরব আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, সেটা আমাদের দেখা উচিত।’

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.