শাস্ত্রীয় সংগীত-জগতে নক্ষত্রপতন : প্রয়াত পণ্ডিত যশরাজ

সৌরভ সেন
ভারতীয় সংস্কৃতি রত্নহীন হল আজ। কিছুক্ষণ আগে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রোজ্জ্বল নক্ষত্র, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কণ্ঠশিল্পী পণ্ডিত যশরাজ (Pandit Jasraj)। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
মেওয়াটি ঘরানার ধারক ও বাহক পণ্ডিত যশরাজের জন্ম অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশে (এখন হরিয়ানায়), ১৯৩০ সালে। তাঁদের পরিবারে মার্গসংগীত চর্চার প্রবাহ ছিলই। তাঁর বড়দাদা পণ্ডিত মণিরাম ও মেজদাদা পণ্ডিত প্রতাপনারায়ণ, দু’জনেই ছিলেন মেওয়াটি ঘরানার প্রতিনিধি ও শ্রদ্ধেয় দুই কণ্ঠশিল্পী। উল্লেখ্য, পণ্ডিত প্রতাপনারায়ণেরই দুই কন্যা সুলক্ষণা ও বিজয়েতা পণ্ডিত খ্যাতনামা দুই চলচ্চিত্র-অভিনেত্রী তথা প্লেব্যাক গায়িকা; এবং দুই পুত্র যতীন-ললিত চলচ্চিত্র-জগতের সুখ্যাত সংগীত-পরিচালক।
পণ্ডিত যশরাজ সংগীতে কোনও গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চাননি। নিজের ঘরানার বাইরে অন্য ঘরানা থেকেও সম্পদ আহরণ করে নিজের গায়কি-কে আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন। খেয়াল ছাড়াও তাঁর ঠুংরি ও ভজনে অনুরক্ত ছিলেন শ্রোতারা। অনুষ্ঠানের শেষ নিবেদনে তিনি যখন ‘মাতা কালিকা…’ ভজনটি ধরতেন, গোটা পরিবেশ হয়ে উঠত সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রণত। অসাধারণ এক নান্দনিক বোধ ছিল তাঁর। চিরকালই ছিলেন সৃষ্টিশীল মানসিকতার অধিকারী।অতিরিক্ত কিছু ‘করে দেখানো’ থেকে সর্বদা নিজেকে বিরত রেখেছেন। পাশাপাশি, উচ্চাঙ্গ সংগীতে ‘অবহেলিত’ বাণী-র প্রতিও তিনি ছিলেন মনোযোগী, গানের কথা-কে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন।
মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে। প্রাসঙ্গিক, তাঁর স্ত্রী মধুরা দেবী ভারতের ‘মুভি মুঘল’ ভি শান্তারামের কন্যা। উল্লেখ্য, তরুণ বয়সে পণ্ডিত যশরাজের কর্মকেন্দ্র ছিল কলকাতা। এই শহরে কাটিয়ে গেছেন টানা ১৪ টি বছর।
গত বছর ২০১৯-এ তিনি এক দুর্লভ সম্মান লাভ করেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণুপুঞ্জের একটি গ্রহ তাঁর নামে উৎসর্গ করে।
Comments are closed.