Bengal Fast
বিশ্ব মাঝে বাংলা খবর

রহস্যময়ী বান্ধবী রিয়া

সুদীপ চট্টোপাধ্যায়

রিয়া চক্রবর্তী (Reah Chakravarthy), কিছুদিন আগেও বলিউডের অতিবড় ভক্ত এই নামটা জানত কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত (Sushant Singh Rajput)-এর রহস্যমৃত্যুর পর সুশান্তের এই বান্ধবীর নাম সকলের জানা হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই সুশান্ত সিং রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে অভিনেত্রী রিয়ার বিরুদ্ধে এফআইয়ার করেছে সিবিআই। এফআইআরে সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, চুরি, প্রতারণা, জোর করে আটকে রাখা ও ভয় দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। রিয়া ছাড়া অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আরও চার জনের নামে। তাঁরা হলেন, রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী, শ্রুতি মোদি, স্যামুয়েল মিরান্দা এবং ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী।

১৪ জুন সুশান্তের আত্মহত্যার পর থেকে তদন্ত চালাচ্ছে মুম্বই পুলিশ। তাদের দাবি, রিয়া বা অন্য কারও বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা বা অভিনেতাকে ঠকিয়ে টাকা নেওয়ার কোনও প্রমাণ তারা পায়নি। কিন্তু ২৫ জুলাই বিহার পুলিশের কাছে করা এফআইআরে সুশান্তের বাবা কে কে সিংহ দাবি করেছিলেন, রিয়া ও তাঁর পরিবার সুশান্তের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং তাঁর উপর অকথ্য মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে। যার জেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় অভিনেতাকে। সুশান্তের বাবার এই এফআইআর যে একেবারে ভিত্তিহীন নয় তা প্রকাশ পায় রিয়ার আচরণে।

সুশান্তের মৃত্যুর পর তিনি এক প্রকার গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। মিডিয়া তো দূর অস্ত, প্রকাশ্যেই দেখা যেত না তাঁকে। তবে সিবিআই তদন্তে, রিয়ার একবছরের যে কল ডিটেলস সামনে এসেছে তাতে সে পরিচালক মহেশ ভাটকে ১৬ বার ফোন করেছিলেন। এমনকী মহেশ ভাটের সঙ্গে রিয়ার অনেক ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ পেয়েছে। অভিনেত্রী রিয়া এবং মহেশ ভাট দুজনেরই ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হয়েছেন।

ফোন কলগুলির বিবরণ অনুসারে, রিয়া পুরো ১ বছরে ১ হাজার ১২২ বার তাঁর বাবা ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকে ফোন করেছিলেন। রিয়া তাঁর ভাই শৌভিককে ৮৮৬ বার ফোন করেছিলেন। রিয়া তাঁর ম্যানেজার শ্রুতি মোদিকে ৮০৮ বার ফোন কল করেছিলেন। শ্রুতি মোদি সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রাক্তন বিজনেস ম্যানেজার ছিলেন। সুশান্ত মামলায় করা সিবিআইয়ের এফআইআর-এ শ্রুতি মোদির নামও রয়েছে।

একই সময়ে, রিয়া গত ১ বছরে তাঁর মা সন্ধ্যা চক্রবর্তীকে ৫৫৭ ফোন কল করেছিলেন। পুলিশ তাঁদের তদন্তে এই কল রেকর্ডকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করছেন। রিয়ার কল রেকর্ড থেকে আরও জানা যায় যে তিনি এই বছর ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে, এই ৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২৫ বার সুশান্ত সিং রাজপুতকে ফোন করেছিলেন। তখন সুশান্ত তাঁর বোনের সাথে চণ্ডীগড়ে ছিল। অবশেষে অনেক টালবাহানার পর গত শুক্রবার ইডির দফতরে হাজিরা দেয় মূল অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তী।

- Sponsored -

প্রসঙ্গত উলেখ্য সুশান্ত মামলার তদন্ত বিহার পুলিশের কাছ থেকে মুম্বই পুলিশের হাতে নিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছিলেন রিয়া সুপ্রিম কোর্টে। তাঁর পাল্টা হলফনামা দাখিল করলেন সুশান্তের বাবা কে কে সিং। তাঁর বক্তব্য, বিহারের রাজীবনগর থানায় করা তাঁর এফআইআর-এর তদন্তভার ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে চলে গেছে। তাই রিয়ার এই আবেদন এখন অপ্রাসঙ্গিক। বলা হয়েছে, রিয়া যদি নিজেই সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন, তাহলে এখন তাঁর কীসের সমস্যা? কে কে সিং-এর হলফনামায় মুম্বই পুলিশের ভূমিকারও তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা শুক্রবার রিয়া চক্রবর্তীকে একটানা ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে ইডি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে রিয়ারের দেওয়া তথ্যে তারা সন্তুষ্ট নয়। জিজ্ঞাসাবাদে রিয়া পুরোপুরি সহযোগিতা করেনি। অনেক প্রশ্নের উত্তরই কায়দা করে এড়িয়ে গেছেন অভিনেত্রী। তবে, ইডি-র জেরায় রিয়া চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সুশান্তের একটি মাত্র ‘সম্পত্তি’ রয়েছে। সেটি হল, সুশান্ত অভিনীত ‘‌ছিছোরে’‌ ছবির স্টিকার লাগানো একটি জলের বোতল। এছাড়াও আছে সুশান্তের ডায়েরির ছেঁড়া পাতা। যেখানে রয়েছে সুশান্ত যে সব মানুষদের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন তাঁদের নামের তালিকা। সেই ছেঁড়া লাইনটানা পাতার প্রথম লাইনে লেখা, ‘‌আমি আমার জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ। সেই পৃষ্ঠার ছবি ইডির অফিসারদের দেখিয়ে রিয়া দাবি করেন, ‘‌এটা ওরই হাতের লেখা। বার বার দাবি করেছেন, তিনি কোনও অপরাধ করেননি। তবে মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকায় রিয়ার বিলাসবহুল দুটি ফ্ল্যাট, তাঁর আয়কর রিটার্ন, ব্যবসায়িক লেনদেন বা পেশাগত আর্থিক ব্যাপারগুলি খতিয়ে দেখছে ইডি।

শনিবার ইডি কর্তারা ১৬ ঘন্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেন রিয়ার ভাই শৌভিককে। ইডি সূত্রে খবর, রাতভর বারবার শৌভিককে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ইডি জানতে চেয়েছিল যে-টাকাটি সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো হয়েছিল, শৌভিক যে-সংস্থার পরিচালক ছিলেন, এবং তার আর্থিক লেনদেনের বিবরণ ইত্যাদি, ইত্যাদি। রিয়া এবং তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে আয়কর রিটার্নের কাগজপত্র চেয়েছে ইডি।

শুক্রবার রিয়ার কথায় অনেক অসংগতি থাকায়, তাঁর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ইডি অফিসাররা। তাই আধিকারিকরা ১১ অগস্ট ফের জেরার জন্য তলব করেছে রিয়াকে। তাই এই কেসের জল যেদিকেই যাক না কেন, একথা স্পষ্ট যে সুশান্ত সিং আত্মহত্যা মামলায় রিয়া যদি সত্যিই নির্দোষ হয়ে থাকেন তবে তদন্তে তিনি কেন অসহযোগিতা করছেন? এর পিছনে কারণটাই বা কী? এই সব প্রশ্নের যাবতীয় উত্তর রয়েছে রহস্যময়ী বান্ধবী রিয়ার অন্তরেই।

ছবি ঋণ : ইন্টারনেট

Subscribe to our Whatsapp Group for daily news alerts.


You might also like

- sponsored -

Comments are closed.