রামকে চিনি, সে বড় কড়া তবে বড় মায়াবী
শুভদীপ চক্রবর্তী
রামকে আমি চিনি না? আলবাত চিনি। জরুর চিনি। বিলক্ষণ চিনি। তবে ‘ভগবান’ রামকে চিনি না। আমি যাকে চিনি, সে বড্ড কড়া ধাতের।
ট্রেনে ছবিওলা চটি রামায়ণ বই বিক্রি হত। আর টিভিতে রামায়ণ ধারাবাহিক চলত। আমাদের তখন টিভি ছিল না। পাড়ায় একটা বাড়িতে গিয়ে দেখেছিলাম কয়েক বার। রামকে চেনা ওই ভাবেই। তবে ছবিওলা বই পড়ে আর টিভি দেখে, রামের থেকে বেশি আমাকে টানত তির-ধনুক। মাছপাতার ডাল ভেঙে তির-ধনুক বানানো চলত।
বাড়িতে বছরকার পুজো হতো লক্ষ্মী, সরস্বতী, শনি আর সত্যনারায়ণের। সন্তোষী মা, বিপত্তারিণী আর শীতলা পুজোও দেখেছি। আর প্যান্ডেলে দুর্গা, কালী, বিশ্বকর্মা, জগদ্ধাত্রী। দু’-এক জায়গায় বাসন্তী, রুদ্রভৈরবী।
রামের পুজো দেখিনি। রামও যে ‘ঠাকুর’ তা বুঝতেই অনেক বছর লেগেছে। সেটা হয়তো আমারই ব্যর্থতা। রামনবমীর কথা অবশ্য জানতাম। কিন্তু রামের পুজো কস্মিন্ কালেও দেখিনি। আর রামমন্দির? সে আবার কী? এ বঙ্গে মন্দির মানে তো শিবমন্দির আর শনিমন্দির। ব্যস্। আর কালীর তো বাড়ি!
পরের দিকে কলেজ-জীবনে রাম-কে নতুন করে চেনায় নীলাঞ্জন। ততদিনে উনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে, মানে নম্বর ওয়ান।
অনেক দিন হল, ধর্মকে মানসিক ভাবে ত্যাগ করেছি। তাই, কখনও রামপুজোর অঞ্জলি দিইনি বলে (রাম-অঞ্জলি হয় তো?) গ্লানি বা হতাশার সাগরে ডুবি না।
তবে ইদানীং মনে হয়, রামের এতটা অবহেলা কি সত্যিই প্রাপ্য ছিল? বোধহয় না।
আজ টিভিতে অযোধ্যা। আর জানলায় অঝোরে বৃষ্টি! চোখ ভিজে আসছে! রোমাঞ্চ হচ্ছে! শিহরন হচ্ছে! বুক ফুলে উঠছে! শিরায়-শিরায় হচ্ছে শুধু রামের আসা-যাওয়া। মনে হচ্ছে সব মিথ্যা। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান। সব তুচ্ছ। সত্য শুধুই ‘রাম’। রাম-ই চরম নিত্য। আদি, অনন্ত। অকৃত্রিম। একটু কড়া তবে বড় মায়াবী।
শুভদীপ চক্রবর্তী। সংবাদ উপস্থাপক ও সাংবাদিক। মতামত ব্যক্তিগত।
ছবি-ঋণ : mygodpictures.com
Comments are closed.