কণ্ঠের জাদুতে এভারগ্রিন চির কিশোর
সুনাসীর চক্রবর্তী
আসমুদ্র হিমাচল গোটা ভারত তার কণ্ঠের জাদুতে আজও মুগ্ধ হয়ে আছে। জনপ্রিয়তার শিখরে থেকেই তিনি চিরবিদায় নিয়েছিলেন আমাদের কাছ থেকে, তবু আজও ভোলা যায় না তাঁকে। মৃত্যুর এত বছর পরেও তাঁর গান আজও সমান জনপ্রিয়। তিনি এভারগ্রিন কিশোর কুমার।
১৯২৯ সালের ৪ অগস্ট মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়ায় এক গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে জন্মেছিলেন আভাষ কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে তিনি হয়ে উঠেছিলেন গোটা ভারতবর্ষের হার্টথ্রব কিশোর কুমার। দাদা অশোক কুমারের হাত ধরে ফিল্মি দুনিয়ায় পদার্পণ। তাঁর পেশাগত জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই তিনি কাটিয়েছেন বলিউডি দুনিয়ায়। ১৯৪৬ সালে ‘শিকারি’ ছবি দিয়ে শুরু করেছিলেন নিজের অভিনয় জীবন। এমনকী প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে হাতেখড়ি হয় হিন্দিতেই। ১৯৪৮-এ খেমচাঁদ প্রকাশের সুরে ‘জিদ্দি’ ছবিতে।
এরপর একের পর এক দিকপাল সুরকারদের সুরে গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন সুরকার ও অগণিত শ্রোতাদের। সেই সময় এভারগ্রিন দেব আনন্দের ছবির জনপ্রিয়তার প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছিল তাঁর গান। এরপর শচীন দেব বর্মণ, রাহুল দেব বর্মণের সঙ্গে জুটি বেঁধে বলিউডে তিনি সৃষ্টি করলেন সঙ্গীতের এক নতুন ধারা। ষাটের দশকের শেষদিকে প্লেব্যাক সিঙ্গিং-এ তাঁকে ছাড়া বলিদুনিয়ায় প্রায় ভাবাই যেত না। ঠিক তখনই বলিউডের আকাশে আর্বিভাব ঘটে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম রাজেশ খান্না। ১৯৬৯ সালে রিলিজ হওয়া ‘আরাধনা’ ছবিতে বলিউডের প্রথম সুপারস্টারের কণ্ঠে শোভা পেলেন তিনি। এই ছবিতে প্লেব্যাক করে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতার পাশাপাশি খ্যাতির শিখরে পৌঁছে যান তিনি। গড়ে উঠে এক এভারগ্রিন জুটি রাজেশ খান্না-কিশোর কুমার।
১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সময়টা ছিল বলিউডের স্বর্ণযুগ। যার সিংহভাগ কৃতিত্বই ছিল রাজেশ-কিশোর হিট জুটির। শুধু রাজেশ জমানাতেই নয়, কিশোরের গলার জাদু পাল্টে দিয়েছিল অ্যাংরিম্যান অমিতাভ বচ্চনকেও। কিশোরের সুরে ‘লাভার বয়’ ইমেজে দর্শকের কাছে নতুনভাবে ধরা দিলেন বিগ-বি। অমিতাভ আর কিশোরের জুটিতে তৈরি হয়েছে একটার পর একটা সুপারহিট গান। যা আজও ভুলতে পারেনি সংগীতপিপাসু সকলেই। তবে শুধু যে গান তাই নয়, অভিনয়েও নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন কিশোর কুমার। ‘নকরি’, ‘মুসাফির’, ‘হাফটিকিট’, ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ বা ‘পড়োশন’ ছবিতে অভিনেতা কিশোর তৈরি করে গেছেন কমেডির এক নয়া ঘরানা।
১৩ অক্টোবর, ১৯৮৭ আজীবন সবাইকে হাসিয়ে শেষ শরতের এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় হাসতে হাসতেই চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন তিনি। তবু আজও তাঁর অপেক্ষায় চেয়ে আছে বাঙালি তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অগণিত গুণমুগ্ধ শ্রোতারা। বলিউডের বেশ কয়েকটি দশকজুড়ে ছিলেন শুধু তিনি আর তিনি। দেবানন্দ থেকে শুরু করে ঋষি কাপুর তাঁর কণ্ঠের বিরাজ সর্বত্র। তাই তিনি হলেন বলিউডের যথার্থই এভারগ্রিন অর্থাৎ চির কিশোর।
ছবি ঋণ : ইন্টারনেট
Comments are closed.