দাপুটে থাকবেন প্রিয় সোমেনদা, প্রথম সাক্ষাৎকারের স্মৃতিচারণা
সোমেন মিত্র ২০১৮-তে ফের প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদে। সদ্য কাজে যোগ দেওয়া তরুণ সাংবাদিক অভিষেক পালের উপরই দায়িত্ব পড়ল তা কভারেজ করার অ্যাসাইনমেন্ট। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতায় স্মৃতিচারণা সোমেন মিত্রকে নিয়ে।
অভিষেক পাল
২০১৮-তে ফের প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদে সোমেন মিত্র। ঘোষণার পরেই তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়ার অ্যাসাইনমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হল আমাকে । সদ্য টেলিভিশন চ্যানেলে কাজে যোগ দিয়েছি তখন। সেভাবে বিশেষ কোনও হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীর সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি তখনও। তবে এমন সুযোগ আসেও না বারবার। একটা চাপা উত্তেজনা নিয়ে পৌঁছলাম সোমেন মিত্রের ফ্ল্যাটে।
আমার পৌঁছানোর আগেই বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়ে ফেলেছেন। আরও কিছু সাংবাদিক অপেক্ষায় আছেন সাক্ষাৎকারের জন্য। তাঁদের সকলের সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রদেশ সভাপতি। আমি মুখ খোলার আগেই ওনার একজন অনুগামী বলে দিলেন, ‘এখন দাদা আর কিছু বলবেন না। আপনারা বসুন। যা হবে, দুপুরে খাওয়ার পর। আপনার আগে আরও ৩টে চ্যানেল লাইনে আছে।’ আমি একটু ইতস্তত বোধ করেই সরাসরি ওনাকে প্রথমে শুভেচ্ছা জানিয়ে, ঠিক ৩ মিনিট সময় চাইলাম।
উনি তাকালেন, ‘মাত্র তিন মিনিট! তাতেই হয়ে যাবে? এসো বসো, মিষ্টি খাও!’
এমন প্রত্যুত্তর পাব স্বাভাবিক ভাবেই আশা করিনি। আমার ক্যামেরাপার্সন শোনা মাত্রই, ক্যামেরা ও বুম লাগিয়ে প্রস্তুত। ওনার বসার একটা বিশেষ সোফা, সেটার পাশে আরও একটা সোফা, সেখানেই বসলাম। উনি আবার বললেন, ‘মিষ্টি নাও’। তারপর বললেন, ‘কী বলার আছে তোমার? এখন দুপুরের খাওয়ার সময় হয়েছে। সকাল থেকে সেভাবে কিছু খাওয়া হয়নি আমার, কিছু ওষুধ খেতে হবে খাওয়ার পর।’ কথা বলার মাঝেই একটা ফোন এসেছিল ওনার। স্ত্রী শিখা মিত্র ফোন এগিয়ে দিতেই, উনি খুব সংক্ষেপে কথা বলে রাখলেন। কথা শুনে বুঝলাম, কোনও সাংবাদিক ওনার একটা প্রতিক্রিয়া চেয়ে ফোন করেছিল। দুপুরের খাওয়ার পর কথা বলবেন জানিয়ে দিলেন। আমি কী বলব বুঝতে পারছি না, এমন সময় দুপুরের খাবার গুছিয়েছেন বউদি, সেটা ফের মনে করিয়ে দিলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘তোমরা রেডি, তাহলে তোমাদেরকে বলে খেতে যাব।’
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েই শুরু করলাম। দিল্লির নেতৃত্ব কাদের সাথে কথা হল… এসব ইত্যাদি ইত্যাদি। অকপটে বলে যাচ্ছেন। রাজ্যে কংগ্রেসের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিতে ওনার মধ্যে কোনও ইতস্ততা বোধ কাজ করেনি। পরিষ্কার করে জানিয়েছিলেন সব প্রশ্নের প্রতিক্রিয়া। তিন মিনিট পেরিয়ে ৬ মিনিটের একটু বেশি সময় লেগেছিল। দলের আগামীর পরিকল্পনা থেকে কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে দাপুটে ভাবটা বেশ ছিল প্রতিক্রিয়ায়।
‘নতুন দায়িত্বে শারীরিক সমস্যা কিছুটা বাধার সৃষ্টি করবে কিনা’, শেষ প্রশ্ন করার পর ওনার মুখের ভাবটা বদলে গিয়েছিল, সেদিন। সেই মুখটা খুব মনে পড়ছে আজও। চোখটা ছলছল করছিল ওনার। জানি না কেন, তারপর থেকে অনেকবার ওনার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে, ফোনেও কথা হত। ওই প্রশ্নটা প্রথমেই থাকত, কেমন আছেন, শরীর কেমন? উত্তর নানারকম আসত। কিন্তু মৃদু হাসিটা সেই একই থাকত… যেখানেই থাকবেন, ওই মৃদু হাসি নিয়েই থাকবেন। দাপুটে থাকবেন প্রিয় সোমেন দা!
ছবি ঋণ : ইন্টারনেট
Comments are closed.